মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৭ম পর্যায়)প্রকল্প পরিচিতি
মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম
‘‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’’ প্রকল্প ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর একটি অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে মসজিদের ইমাম সাহেবদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৩ সালে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক এবং ঝরে পড়া (ড্রপ-আউট) কিশোর-কিশোরী ও অক্ষর জ্ঞানহীন বয়স্কদের জন্য ‘‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’’ এর কাজ শুরু করে এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৬টি পর্যায় শেষ করে বর্তমানে ৭ম পর্যায়ে পদার্পণ করেছে
প্রকল্পটির আকার পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ‘‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’’ দেশের শিক্ষা সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করে আসছে এ প্রকল্পে মসজিদের ইমামগণ মসজিদ কেন্দ্রে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা, অংক, ইংরজী,আরবী,নৈতিকতা ও মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দান করছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধা বঞ্চিত স্থানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার ও কোর্স সম্পন্নকারীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী অধিকাংশই সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠি এ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০জন, সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫জন ও বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ জন
ধারাবাহিকভাবে চলমান এ প্রকল্পটির আওতায় ১ম পর্যায়ে মোট ৯৪ হাজার ৫৯০জন, দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ৭ লক্ষ ২৩ হাজার ৮৮০জন, ৩য় পর্যায়ে মোট ১৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪০জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করা হয় একই ধারাবাহিকতায় ৪র্থ পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে ২৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০০জন শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক ও পবিত্র কুরআন শিক্ষা প্রদান করা হয়
অনুরূপভাবে প্রকল্পের ৫ম পর্যায়ে জানুয়ারী ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ৬৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ২০০জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দান করা হয়েছে যার অগ্রগতি ১০০%
পূর্বের ধারাবাহিকতা অনুসারে ‘‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’’ শীর্ষক ৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পটি জাতীয় একনেক কর্তৃক প্রথম দফায় ১৫০৫৯৩.০০ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ রেখে ১ জানুয়ারী, ২০১৫ সাল হতে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদ ভিত্তিক অনুমোদিত হয় এবং তা দ্বিতীয় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে ২২৭২০৪.০০ লক্ষ টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখে ৬ষ্ঠ পর্যায় (১ম সংশোধনী) প্রকল্প হিসেবে উক্ত মেয়াদে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয় যার মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক,সহজ কুরআন শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষাসহ ৩টি স্তরে মোট ৯৬ লক্ষ ১৬ হাজার জনকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হয়
এ হিসেবে প্রকল্পের ১ম পর্যায় হতে ৬ষ্ঠ পর্যায়ের ২০১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক,সহজ কুরআন শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষাসহ ৩টি স্তরে সর্বমোট ২ কোটি ১৫ লক্ষ ৯ হাজার ৯৫০জনকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে
শতভাগ সফল প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেশের আপামর জনসাধারণকে নাড়া দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে তারই ফলশ্রুতিতে প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তেক্ষেপে গত ১০/০৫/২০২০ তারিখে ৭ম পর্যায়ের প্রকল্প হিসেবে জানুয়ারী, ২০২০ সাল হতে ডিসেম্বর, ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদের জন্য ৩১২৮ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দের আলোকে গৃহীত হয় যা বর্তমানে ৭ম পর্যায় প্রকল্প হিসেবে চলমান রয়েছে চলমান এ ৭ম পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ভর্তির হার বৃদ্ধির লক্ষে সারাদেশব্যাপী ২৮ হাজার ৮০০টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৩ লক্ষ ২০ হাজার জন শিশু শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দান এবং শিক্ষাদান শেষে কমপক্ষে ৮০% শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা, বয়স্ক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ধমীয় মূল্যবোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সাক্ষরতা হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাদেশে ৭৬৮টি বয়স্ক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৯৬ হাজার জন বয়স্ক (পুরুষ,মহিলা ও জেলখানার কয়েদী) লোকদেরকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা এবং ৪৪ হাজার ২০০টি সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৭৭ লক্ষ ৩৫ হাজার জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও ঝরেপড়া কিশোর-কিশোরীদের শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষাদান ও বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক শিক্ষা প্রদানসহ ৩টি স্তরে সর্বমোট ১ কোটি ২১ লক্ষ ৫১ হাজার জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদানের কাজ অব্যাহত রয়েছে
এছাড়াও প্রকল্পের নব্য ও স্বল্প শিক্ষাপ্রাপ্তদের জন্য জীবনব্যাপী (অব্যাহত) শিক্ষা চর্চা ও আর্থ-সামাজিক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ৫৫০টি মডেল ও ১৫০০টি সাধারণ রিসোর্স সেন্টারসহ মোট ২০৫০টি রিসোর্স সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে
এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার আলেমের দীনী দাওয়াতভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় তাদের সম্মানী ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা ১২৯৩টি কেন্দ্র রয়েছে। তারমধ্যে প্রাকপ্রাথমিক ৪৭০টি , কুরআন শিক্ষা ৮১১টি ও ১২টি বয়স্ক শিক্ষা কন্দ্র রয়েছে।
১০১০টি দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক অভিপ্রায় ও দিকনির্দেশনায় প্রকৃত ইসলামী চেতনার মর্মালোকে আরবি ধারায় একটি দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে একযোগে ১ হাজার ১০টি দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা প্রসূত এক মহতী উদ্যোগের ফসল ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা, র্মমবানী ও চেতনার প্রচার ও প্রসার এবং আরবী ভাষা শিক্ষার অর্পূব সুযোগ তৈরী হয়েছে দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। প্রকৃতপক্ষে কোন সরকার প্রধান কর্তৃক এক সাথে ১ হাজার ১০টি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন ৫ সহস্রাধিক উচ্চ শিক্ষিত আলেম-ওলামার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তেমনি লক্ষাধিক শিশু আরবী ভাষায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
‘দারুল আরকাম’ নামকরণঃ
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকেই ওহীভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারকল্পে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ইসলামের প্রাথমিক স্তরে নব দীক্ষিত মক্কার মুসলমানদেরকে হাতে-কলমে মহান আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা প্রদানের জন্য মক্কার নিকটবর্তী সাফা পাহাড়ের পাদদেশে সাহাবী হযরত আরকাম (রা)-এর ঘরকে নির্বাচন করেন। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মাদ্রাসা হিসেবে যা ‘দারুল আরকাম’ নামে পরিচিত। দারুল আরকাম নামক এ শিক্ষালয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) স্বয়ং শিক্ষকতা করেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত ‘দারুল আরকাম’ নামক এ শিক্ষা নিকেতনে নব দীক্ষিত মুসলমানদের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সা) দাওয়াতভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ শিক্ষা কেন্দ্র থেকেই নবী করীম (সা) কুরাইদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।
দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পটভূমিঃ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে একনেক সভায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদনকালে এ মর্মে সদয় নির্দেশনা প্রদান করেন যে,“বাংলাদেশের যে সকল এলাকায় স্কুল নেই সেখানে এ প্রকল্পের মসজিদভিত্তিক শিক্ষায় অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’’ ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মর্মে মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেন যে,“শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে প্রতিটি শিশুর জন্য প্রযোজ্য ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি স্টাডি/যাচাই করা যেতে পারে।”
১৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’-এর আওতায় আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স চালুকরণ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মর্মে সদয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে,“শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানে মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। এখানে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি আরবী ভাষা শিখলে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে কাজে লাগবে। মসজিদভিত্তিক শিক্ষায় আরবি ভাষা শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
প্রেক্ষিতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় বিগত ৩ বছর যাবৎ গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় প্রতিটি উপজেলায় ২টি করে মোট ১০১০টি দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্পটি ২৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে ১ম সংশোধন প্রকল্প হিসেবে অনুমোদিত হয়, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৭২০৪.০০ লক্ষ টাকা। ইতোমধ্যে ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাস থেকে সারাদেশে ১০১০টি দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা চালু হয়েছে। ১০১০ জন কওমি নেসাব ও ১০১০ জন আলিয়া নেসাবের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারুল আরকাম এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা।
নোয়াখালী জেলা প্রতি উপজেলায় ২টি করে মোট ১৮টি দারুল আরকাম মাদ্রাসা রযেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস